Recents in Beach

অলিভার টুইস্ট চার্লস ডিকেন্স


রূপান্তরঃনিয়াজ মোরশেদ
ইংল্যান্ডের এক শহরের অনাথ আশ্রমে জন্ম হয় অলিভার টুইস্টের। অলিভারের জন্মের কিছুক্ষনের মধ্যেই মারা যায় তার মা।সকলে ভেবেছিলো অলিভারও বাঁচবে না।কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে যখন অলিভার কেঁদে উঠলো তখন সবাই একটু অবাক হলো।পরে আট-দশ তার সেই গির্জার আশ্রমেই কাটলো।এর তাকে এই আশ্রমেরই একটা শাখা আশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।আশ্রমে তার মতই আরও বিশ ত্রিশজন পিতৃমাতৃহীন ছেলেরা থাকত। মিসের মান নামের একজন মহিলা তাদের দেখাশুনা করেন । প্রতিটি বাচ্চার ভরনপোষণ এর জন্য সপ্তাহে যদিও সাত পেন্স করে পান তিনি সরকারের কাছ থেকে কিন্তু বেশীর ভাগ অর্থই তিনি চালান দেন নিজ তহবিলে।বেঁচে থাকার জন্য ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ঠিক সেই পরিমান খাবারের বেশী এক কনাও বেশী দেন না।

অনাথ আশ্রমে এমন কষ্টেই তার দিনগুলো কাটছিল।সেখানে অল্প খাবার দেয়া হতো। যার কারনে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু ফ্যাকাসে আর লিকলিকে ছিল আর তাই তাকে দেখে বোঝা যেত না সে ৯ বছরে পা দিয়েছে।একদিন আশ্রমে আরেকটু বেশি খাবার চাওয়ায় তাকে মারধর করা হয়।

একদিন মিসেস মান দেখলেন মিস্টার বাম্বল আসছেন আশ্রমের দিকে। মিস্টার বাম্বল হল মূল অনাথ আশ্রমের সেক্রেটারী। মিস্টার বাম্বল বললেন আজ অলিবার টুইস্টের নয় বছর হল তাই ওকে এখন মূল আশ্রমে ফিরিয়ে নিতে চাই। খাওয়ার পর অলিবার মিস্টার বাম্বলের সাথে নতুন আশ্রমে গেলেন। তাকে নিয়ে গেলো এক রুমে যেখানে তারমত অনেক ছেলেরা আছে । সবাইকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট কাজ করার পরই এক সাথে খেতে দেওয়া হয়। পুরানো আশ্রম থেকে যদিও এইখানের খাবার টা একটু উন্নত কিন্তু সারাদিন কাজ করতে করতে বাচ্চা ছেলেগুলোর দারুন ক্ষুধা লেগে যায়। কিন্তু ভয়ে কেই মুখ ফুটে বলেনা । একদিন খাবার ঘরে অন্য সকল বাচ্চাদের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে এক বাটি স্যুপ নিয়ে ফিরে আসল অলিভার । হঠাৎ কয়েকটা বাচ্চা অলিভারকে বলল আরেকটু স্যুপের কথা বল সবার জন্য। যদিও অলিভার প্রথমে রাজী হয়নি কিন্তু সবার জোরাজুরিতে পরিবেশনকারী লোকটিকে গিয়ে বলে। লোকটি তৎক্ষণাৎ মিস্টার বাম্বলের কাছে বিচার দিল আর তার কথা শুনে জুরি বোর্ডের সকলে ক্ষেপে গেল। সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে সবাই সিদ্ধান্ত নিল অলিভারকে এক সপ্তাহ তলকুঠরিতে বন্দী করে রাখা হবে এবং আশ্রমের গেটে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হল কেউ যদি তাকে শিক্ষানবিশ হিসেবে নিতে চায় তাহলে তাকে পাঁচ পাউন্ড দেওয়া হবে।

মিস্টার সোয়াবেরি একজন কফিন নির্মাতা তার কাজে সাহায্য করার জন্য অলিভারকে নিয়ে যান। মিসেস সোয়াবেরি অলিভারকে পাঠিয়ে দিলেন নোংরা স্যাতস্যাতে এক কুঠুরিতে যেখানে বসে এক মেয়ে রান্না করছে। মেয়েটির নাম শালর্ট যাকে কিনা মিসেস সোয়াবেরি অলিভারকে খাবার দেওয়ার কথা বললেন।এ বাড়িতে তেরো চৌদ্দ বছরের নোয়া নামের কাজের ছেলে আছে যে সবসময় অলিভারকে গালমন্দ করে। প্রতিদিন খেতে বসার সময় নোয়া অলিভারের মাকে উদ্ধেশ্য করে নানা রকম বাজে কথা বলে,কিন্তু প্রতিদিনই অলিভার চুপ করে সব সহ্য করে। একদিন নোয়া অলিভার কে এমন বিরক্ত করা শুরু করল যে শেষে না পেরে অলিভার নোয়াকে মারতে গেল। কিন্তু নোয়া উল্টা অলিভারের নামে তার মুনিবিনিকে মিথ্য মিথ্যা কথা বলল।নোয়া আর শার্লটের কথা বিশ্বাস করে মিসেস সোয়াবেরি অলিভারকে আবার মারল এবং এক কুঠুরির অন্ধকার ঘরে আটকে রাখল।

সেদিন সারা রাত অলিভার কান্না করল এবং এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।আর তাই একটু অন্ধকার থাকতে থাকতে অলিভার ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একসময় অন্য এক শহরে এসেছে।টানা সাত দিন হেঁটে সে কোনোমতে ইংল্যান্ড পৌছে।

সেখানে পৌছার পর ক্ষুধা তৃষ্ণনায় অলিভার এতই কষ্ট পেতে লাগল যে সে আর হাঁটার শক্তি পেলনা। এক ছেলে তখন তাকে একটি ভাঙ্গাচোরা হোটেলে নিয়ে গেল এবং খাবার খাওয়ালো। ছেলেটির নাম জ্যাক ডকিনস।সে অলিভারকে আশ্রয় দিবে বলে তাকে এক ইহুদি লোকের কাছে নিয়ে যায়।ইংল্যান্ডে পৌছেই সে যে চোরাকারবারির খপ্পরে পড়েছে তা সে প্রথমে বুঝতে না পারলেও ধীরে ধীরে সবই বুঝতে পারে।কিন্তু চাপে পড়ে সে ভাগ্যকে মেনে নেয় এবং ইহুদির চাপে পড়ে তাকে কিভাবে চুরি করতে হবে তাকে তা শেখানো হতে থাকে। ফ্যাগিন নামক এক ইহুদির অধীনে সে চুরিবিদ্যা রপ্ত করতে থাকে। তাদের সাথে আরো কয়েকজন সঙ্গী সাথী ছিল।

একদিন ডজার সহ আরেকটি ছেলের সাথে তাকে বাইরে পাঠায় ইহুদি। তারা একটি লোকের মানিব্যাগ নিয়ে দৌড় লাগাল।মানুষ ভাবল অলিভারই চোর।তাই তারা তাকে অনেক মারধর করে প্রায় শেষ করে ফেলছিল ঠিক সে সময়ই যার মানিব্যাগ নিয়ে গিয়েছিল সেই ভদ্রলোক মিস্টার ব্রাউনলো এসে অলিভারকে উদ্ধার করলেন।পরে দোকানি এসে বললেন যে সে দেখেছে অন্য আরেকটি ছেলে মানিব্যাগটি নিয়েছে।

এর পর অলিভারের নামে মামলা হয় কিন্তু একজন লোক এসে সাক্ষ্য দেয় যে অলিভার চুরি করে নাই তাই তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।আর তখন সেই ভদ্রলোকটি অলিভারকে তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং সেইখানে তার হাউজকিপার এক বুড়ি মিসেস বেডউইন সেবা শুশ্রুরা করে অলিভারকে সারিয়ে তুললেন।কিন্তু অলিভার এসবের কিছুই জানতে পারলেন না কারণ সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল।

মিস্টার ব্রাউনলোর কয়দিন থেকেই মনে হচ্ছে অলিভারের চেহারার সাথে তার পরিচিত কারো খুব মিল রয়েছে।একদিন অলিভার বাইরে গেলে তাকে আবার সেই বুড়ো ইহুদী দলের এক মেয়ে ন্যান্সি নিয়ে যায়।এবং আবারও অলিভারের জীবনে বিপর্য় নেমে আসে।কিন্তু সে পন করে সে কিছুতেই চুরি করবে না।কিন্তু একদিন বুড়ো ইহুদি অলিভারকে মস্কস নামের এক বড় ডাকাত এর কাছে দেয় ডাকাতির কাজে সাহায্য করতে।

তারা শহর থেকে একটু দূরে কোন এক বৃদ্ধার বাড়িতে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু তারা ঢুকতে গিয়েই ধরা পড়ে এবং নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছুড়তে লাগল এবং একটা গুলি এসে লাগল অলিভারের হাতে।তখন সেই ডাকাত অলিভারকে একা ফেলে চলে গেল এবং অলিভার অনেক কষ্টে একটা বাড়িতে এসে সাহায্য চাইলো এবং সে এটাও বুঝতে পারে নি একটু আগে এ বাড়িতেই চুরি করতে এসে সে গুলি খেয়েছে।কিন্তু অলিভারকে দেখে তাদের মায়া হলো আর তাই অলিভারের সেবা করে তাকে সারিয়ে তুলল বাড়ির লোক এবং পরে তার মুখ থেকে সকল কাহিনী শুনল।বাড়ির বুড়ি সহ রোজের ছেলেটার প্রতি মায়া পড়ে গেছে এবং তারা বিশ্বাস করল অলিভার সত্যিই বলছে। অলিভার তাদের কে বলেছে যে সে মিস্টার ব্রাউনলোর সাথে একবার দেখা করতে চায় এবং তার টাকা ফিরিয়ে দিতে চায়।

এরই মধ্যে অলিভারকে যে ভদ্রলোক পুলিশের হাত থেকে তাকে রক্ষা করেছিল তার সাথে পুনরায় তার সাক্ষাত হয়।অন্যদিকে অলিভার যে শহরে পোঁছে গেছে তার খবর মস্কস সহ ইহুদি সাইকস পেয়ে গেছে তাই তারা তাকে ধরার জন্য অনেক চেষ্টা করছে।এই দিকে ন্যান্সি গোপনে রোজের সাথে দেখা করে বলেছে সে চায় অলিভারের একটা সুন্দর জীবন হোক।মঙ্কস নামে এক ব্যক্তি তার পরিচয় জানতে অনাথ আশ্রমে আসে। মঙ্কসের সাথে ইহুদি ফ্যাগিনের সখ্যতা ছিল।

ঘটনাক্রমে মঙ্কসে জানানো হয় তার বাবা নৌবাহিনীর এক অফিসারের মেয়েকে ভালোবাসে। তাদের ঘনিষ্টতা গড়ে ওঠে। সময়মত বিয়েটা তারা করতে পারেনি।এই প্রেমের ফসল হচ্ছে তোমার ভাই অলিভার টুইস্ট।আর তাই সে অলিভার কে মারার জন্য সব রকম পরিকল্পনা করতে থাকে।

তোমার বাবার এক আত্মীয় নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে তার সম্পত্তি উত্তরাধিকারী হন তোমার বাবা। মঙ্কসের বাবা মারা যাওয়ার আগে উইল করে যান যদি তার আগত সন্তান যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে তাহলেই সব সম্পত্তির উত্তরাধীকারি হবে।

অলিভারকে বাঁচানোর জন্য শেষ পর্যন্ত তাকে জীবন দিতে হয়েছিল।কিন্তু ন্যান্সি নামের সেই মেয়েটি মরার আগে অলিভারকে মঙ্কস কেনো খুঁজতেছে এবং তাকে হত্যা করার পরিকল্পনার কথা ব্রাউনলোকে বলে যায়।মি ব্রাউনলো ও ডাঃ লসবার্ন দুজন মিলে ইহুদি ফ্যাগিনকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়।এবং মঙ্কসকে আটক করে নিয়ে আসে।

অলিভারের বাবা এডয়ার্ড লিফোর্ডেকজন নাবিক ছিলেন এবং তার প্রথম ঘরের সন্তান মস্কক। কিন্তু নাবিক থাকা অবস্থায় তিনি অলিভারের মা ফিস্তির প্রেমে পড়ে যান।লিফোর্ড মারা যাওয়ার আগে মস্ক ও তার অনাগত সন্তানের নামে সমান উইল করে যান কিন্তু উইলে বার বার উল্লেখ করেন মস্ক যদি ভালো ও চরিত্রবান হয়ে গড়ে উঠলে তবেই সে তার সম্পতি ভাগ পাবে। কিন্তু মস্ক তার সম্পত্তির বেশীরভাগ অংশই জুয়া খেলে শেষ করে দেয়।

এবং যখন সে ইহুদীর কাছে সে অলিভারকে দেখতে পেল।তখন তার সন্দেহ হল যে এ তার সৎ ভাই কারন তার চেহারার সাথে তার বাবার চেহারার হুবুহ মিল রয়েছে।পরে সন্ধান করে দেখে সত্যিই অলিবার তার ভাই। তাই তাকে শেষ করে দিতে চায়। আর সেজন্য সে অলিভারকে নিয়ে যায় অই কাজে।এবং সে সেই আশ্রমে গিয়ে তার সৎ ভাইয়ের পরিচয়ের একমাত্র প্রমান নষ্ট করে ফেলে।।

পৈতৃক উইল অনুযায়ী অলিভার সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হলেও সে তার ভাই মঙ্কসকে তার অর্ধেকটা সম্পত্তি দিয়ে দিল। মিস্টার ব্রাউনলো অলিভারকে পালকপুত্র রুপে গ্রহন করেন।পরিশেষে যে বাড়ীতে আশ্রিত ছিল অলিভার সে বাড়ীর মেয়ে রোজ অলিভার টুইস্টের নিজের বোন জানা গেল,যাকে অলিভার খালা বলে ডাকত।এবং পরে অলিভার তার বোন রোজের স্নেহ ও মিস্টার ব্রাউনলোর সাথে আথিতেয়তায় সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল।

চার্লস ডিকেন্স এর প্রত্যেকটা উপন্যাসই অসাধারণ। কালজয়ী এ বইটা পড়ে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি।এই গল্প পড়ে বার বার মনে হয়েছে প্রত্যেক মানুষের পরম বন্ধু সে নিজেই।কারণ অলিভার টুইস্ট যদি ভেঙে পড়তেন তাহলে হয়তো সে কোন দিন এই ভালো দেখতে পেত না। সে হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও ভেঙে না পড়ে ধৈর্য ধারণ করেছিলেন আর তাই এক সময় ঠিকই সুদিন এসেছিল।যারা সৎ পথে থাকে সৃষ্টিকর্তাও তাদের সাথে থাকেন এই গল্পটা পড়ে বার বার তাই মনে হয়েছে।গল্পে আরও অনেক কিছু আছে যা লিখলে লেখা টা আরও বড় হবে। তাই আশা করি যারা বই প্রেমি তারা বইটা পড়বেন। আর আমি ১০০% বলতে পারি আপনারা নিরাশ হবেন না বরং অনেক খুশি হবেন বইটা পড়ে।

ধন্যবাদ

Post a Comment

0 Comments