রূপান্তরঃনিয়াজ মোরশেদ
গল্পের মুল চরিত্র হলো পিপ।বাবা মা মারা যাওয়ার পর ছোট্ট পিপ তার বোনের সাথেই থাকে। বোনের স্বামী জো পেশায় একজন কামার হলেও তার মনটা বড় নরম। পিপকে সে ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু পিপের বোন সারাক্ষণ তাদের দুজনকে শাসনের ওপরে রাখে।তার বোনের এই খিটমিটে স্বভাব দেখেই পিপ একটু একটু করে বড় হয়ে উঠছিল।এবং সে এটাও বুঝতো তার বোন তাকে অনেক ভালোবাসে।
একদিন বাড়ি থেকে কিছু দূরে জলাশয়ের কাছে পিপের বাবা মায়ের কবরের কাছে ঘুরতে যেয়ে পিপের দেখা হলো এক কয়েদির সাথে। জাহাজ থেকে পালানো ফেরারী কয়েদী।সেই কয়েদি তার কাছে খাবার খাইতে চাইলে পিপ বাড়ি থেকে তার বোনের কাছে লুকিয়ে সেই কয়েদীকে খাবার খাইয়েছিল। যা সেই কয়েদি মনে রেখেছে তার বাকি জীবনকাল।
দূরন্তপনা,খেলাধুলা আর জো এর সাহায্য করেই হয়তো পিপ এর জীবন অতিবাহিত হতো যদি না তার দেখা হতো শহরের সবচেয়ে ধনী আর অদ্ভুত মহিলা মিস হ্যাভিশাম আর তার সুন্দরী পালিতা কণ্যা এস্টেলার সাথে। অদ্ভুত মহিলা এই মিস হ্যাভিশাম যিনি বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন একই পোশাকে, একই ঘরে এবং একই পরিবেশে।কারণ তার বিয়ের দিন তাকে বিয়ে করতে চাওয়া লোকটি তাকে ছেড়ে চলে যায়।পিপ এই মহিলা কে ভয় যেমন পেত ঠিক তাকে দেখে তার করুনাও হতো।
এর পরে বেশ কিছু দিন ওই বাড়িতে তার ভালোই যাওয়া আসা চললো।এবং ধীরে ধীরে সে এস্টেলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতো। এবং এমনি একসময় তাকে ওই বাড়িতে যেতে নিষেধ করে দিলেন মিস হ্যাভিশাম এবং তাকে জো এর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার বন্দোবস্ত করে দিলেন।বোন একটু বেশী শাসন করত পিপকে কিন্তু বোনের স্বামী জো কখনো বন্ধু আর কখনো বা ছেলের চোখে দেখত।বোনের স্বামী জো এর ইচ্ছে পিপ তার সাথে কামার শালায় তার সহযোগী হয়ে কাজ করুক এবং যখন পিপ তার শিক্ষানবিশ হয়েছিল সে খুব খুশিই হয়েছিল। একটা সময় পিপ এর ও তেমন ইচ্ছে ছিল কিন্তু যবে থেকে পিপ মিসেস হ্যাভিশাম এর বাড়িতে যাতায়াত শুরু করল ঠিক তখন থেকেই তার এক্সপেকটেশানস গুলো বড় হতে থাকলে তার কিছু টা কারন এস্টেটেলার জন্য।কারন ততদিনে পিপ এর মনে এস্টেলা জায়গা করে নিয়ে ছিল।কিন্তু পিপ কোনদিনও হয়তো এস্টেলার মনে কোন জয়াগা পায় নি।কারণ সে মিস হ্যাভিশাম এর কারণে অত্যন্ত রুক্ষ ও বদ মেজাজি হয়ে গড়ে উঠতেছিল।
হঠাৎ পিপ ও জো এর কাছে একজন লোক দেখা করতে এল তার নাম মিস্টার জাগার্স যে কি না হ্যাভিশাম এর উকিল।সে বলল তার একজন মক্কেল চান যে পিপ একজন ভদ্রলোক হোক, শিক্ষিত হোক,লন্ডনে গিয়ে পড়াশোনা করুক। তার জন্য যা খরচ হবে সে দিবে।এই কথা শোনার পর পিপ খুব খুশি হলো এবং পিপ মনে মনে ধারনা ছিল এই সব কিছু র পেছনে হয়তো রয়েছে হ্যাভিশাম।সে চায় পিপ বড় হোক এস্টেলার সাথে তাকে মিল করিয়ে দিবে। এই আশায় রয়েছে দীর্ঘ দিন।এভাবেই সে লন্ডনে পড়াশোনা করছিল এবং ধীরে ধীরে সে সম্পূর্ণ বদলে যায়।সেই সাথে তার খরচের হাতও অনেক বেড়ে যায়।এবং পুরো বন্ধু জো এবং নিজের বেড়ে ওঠা সেই জায়গা টাকেও ভুলে গিয়ে অকৃতজ্ঞ এর মত আচরণ করে। সে জো এর সাথেও অনেক নিষ্ঠুর আচরণ করে। এরই মধ্যে তার বোনও মারা যায়।সব মিলিয়ে পিপ নিজেকে ভদ্রলোক ভাবতে শুরু করে আর তাই সে সবার সাথে মিশতে চায় না।
তবে একদিন তার এই গ্রেট এক্সপেকটেশান ভূল প্রমানিত হলো। একভদ্র লোক এলেন এবং তাকে সাহায্য করেছেন তা বললেন।তখন পিপ যেন সব কিছু অন্ধকার দেখতে শুরু করলো।তার সকল দর্প যেন এক মুহুর্তে চূর্ন হয়ে গেল।কারন তার এই ভদ্রলোক বানানোর পিছনের লোকটি কে সে চিন্তে পারলো।সেই লোকটি আর কেউ নয় সেই ছোটবেলার সেই কয়েদি।যাকে কি না সে একবেলা খাইয়েছিল আর তারই প্রতিদান স্বরুপ সে পিপ কে সাহায্যে করছে ভদ্রলোক হতে।
পিপ এর সকল দর্প অহমিকা চূর্ন হলো এবং সে অনুতপ্ত হলো। ভদ্রলোক হওয়ার নেশায়, এস্টেলা কে পাওয়া আাশায় জো এবং বিডি প্রতি অবিচার করেছে।।তাদের ছোট করেছে।সব কিছু তার সামনে ভাসতে শুরু করেছি। এর মধ্যে সেই কয়েদি পুলিশ এর কাছে ধরা পরেছে এবং তার সর্বোচ্চ হারিয়েছে।এর মধ্যে পিপও বুঝতে পেরেছে সে তার সর্বোচ্চ হারিয়েছে এবং সেই সাথে এস্টেলাকেও।
পিপ চেষ্টা করেছিল কয়েদি কে বাঁচাতো আইনের হাত থেকে, ফাঁসীর হাত থেকে কিন্তু পারে নি।আইনের হাতে ধরা পরল সেই কয়েদী।।ফাঁসীর রায় হলো তারর কিন্তু তার আগেই সে মারা গেল।কিন্তু তার আগে পিপ জানতে পেরেছিল এই কয়েদি এস্টেলার বাবা হন। এবং মার পরিচয়ও পেয়েছিলেন। কিন্তু এস্টেলা ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে সব লুকিয়েছিল পিপ।
এই সব দুঃসময়ে পিপ অসুস্থ হয়ে যায় এবং সে সময়ও তার পাশে এসে জোই ছিল এবং পিপ এর ধার করা টাকাও সেই শোধ করেছিল।আর তাই সুস্থ হওয়ার পর যখন সব জানতে পারলো তখন সে ছুটে এলো জো এর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে।এসে দেখলো জো আাবার বিয়ে করেছে ডিবি কে। কারন তার বোন মারা যাওয়ার পর ডিবি জোর দেখভাল করতে।দু'জন ভাল মানুষ এক হয়েছে দেখে পিপ তাতে খুশি হলো এবং তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো।এবং সেখানেই সে থকতে শুরু করলো।কিন্তু সময় যেন তার কাটে না।সে খুব হতাশায় দিন কাটাইতে লাগলো।এটা দেখে জো আর ডিবি ও কষ্ট পেত।
এরপর পিপ তার বন্ধু হারবার্ট এর অফিসে কাজ শুরু করেছিল এক সময়।এই সেই বন্ধু যাকে এক সময় পিপ অনেক সাহায্য করেছিল তা হারবার্ট কোন দিন জানতেও পারে না।কিন্তু তারা প্রকৃতই ভালো বন্ধু ছিল।এরপর পিপ বন্ধুর অফিসে মন দিয়ে কাজ করতে থাকে এবং সেখানে তার পদন্নোতি ও হলো এবং সে সব কিছু মিলে ভালোই উন্নতি করলো নিজের যোগ্যতা বলে।কিন্তু সে এস্টেলাকে যেন কোন দিন ভুলতে পারলো না।
অনেকদিন পর এস্টেলার সাথে ও দেখা হয়,মিস হ্যাভিশাম মারা গেলে।এস্টেলা তার স্বামীর কাছে সুখি ছিল না এবং প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত হতো।আর তাই তো এস্টেলা তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে হ্যাভিশামের বাড়িতে চলে আসে। মিস হ্যাভিশাম মারা যাওয়ার পর সেই দেখাশোনার ভার নেয় বাড়িটা। আর সেই পুরোনো বাগান,যেখানে পিপ আর এস্টেলার প্রথম দেখা হয়েছিল।সেই বাগানেই তারা আবার হেঁটে বেড়াতে বেড়াতে আবার কথা বললো যেন সেই ছোটবেলার মত।
মানুষ,মানুষের প্রতি এক্সপেকটেশানস করবে এটা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু এত বেশি এক্সপেকটেশানস না করাই উচিত।কারন দিন শেষে এক্সপেকটেশন সব সময় কষ্টের কারন হয় ঠিক যেমন টা পিপের ক্ষেত্রে হয়েছিল।আর কোন অবস্থায় নিজের আপনজনদের কে দূরে সরানো উচিত নয়।কারন খারাপ সময় তারাই পাশে থাকে।কিন্তু অনেক সময় মানুষ বেশী কিছু পাওয়া লোভে নিজের এই কাছের মানুষগুলোকে অবহেলা করে এবং তাদেরকে ছেড়ে চলে যায় কিন্তু একটা সময় গিয়ে ঠিকই তারা বুঝতে পারে তাদের ভূল গুলো কিন্তু তত দিনে ভূল সুধরানোর আার সময় থাকে না এবং অনেক দেরি হয় ঠিক যেমন টা পিপ এর হয়েছিল। তার বোন মারা গিয়েছিল সে তার কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চাইতে পারে না।
অনেক চড়াই উৎরাই,অনেক মানুষের সান্নিধ্যে আসে পিপ তার এই জীবনে।আর সেই সাথে অনেক অনেক চরিত্রের সংমিশ্রণ ঘটছে এই উপন্যাসে।মোটকথায় অসাধারণ একটা উপন্যাস। আমরা যদি অন্যের উপর আশা ছেড়ে দিয়ে নিজের যোগ্যতা দিয়ে কিছু করি তাহলে সফলতা একদিন ঠিকই আসে।আর তাই এই উপন্যাস টা আমার অসাধারণ লেগেছে।
0 Comments