বহুব্রীহি ১৯৯০ সালে প্রাকাশিত হুমায়ুন আহমেদ স্যারের একটি পারিবারিক গল্প নিয়ে তৈরি উপন্যাস।হুমায়ুন আহমেদ স্যারের পরিচালনায় এই নামে একটা নাটক আছে।আর এই বইটিকে কেউ যদি সেই নাটক থেকে রূপান্তরিত উপন্যাস মনে করেন তাহলে সেটা ঠিক হবে না।।
হুমায়ুন স্যার যা করেছেন তা হল, মূল কাঠামো ঠিক রেখে একটা মজার উপন্যাস লেখার চেষ্টা করেছেন। কিছু অন্য ধরনের কথা, হাসি, তামাশা মাঝখানে রেখেছেন। সেই সব কথা, রঙ্গ রসিকতা পুরোপুরি অবশ্য ঢাকা পড়েনি। কিছু না কিছু থেকেই যাবে।।
এই উপন্যাসটি যদি কেউ সেই নাটকের সঙ্গে মিলিয়ে পড়েন তাহলে আপনি হতাশ হবেন অবশ্যম্ভাবী। আর সে চেষ্টা না করাই ভালো।এই বইটি হুমায়ূন স্যার অনেক গভীর আগ্রহ ও আনন্দ নিয়ে লিখেছিলেন। সেই আনন্দের ভগ্নাংশ হিসেবে যদি আমরা বইটিতে খোঁজার চেষ্টা করি তবুও স্যারের শ্রম সার্থক হবে বলে তিনি মনে করেন।
উপন্যাসের প্রত্যেকটা চরিত্রই অসাধারণ।উপন্যাসের মূল কাহিনী মূলত একটা বাড়িকে ঘিরে।সে বাড়ির নাম বাড়ির কর্তা রেখেছিলেন নিরিবিলি তা কিভাবে যেন হয়ে গেল নিবিরিলি!ওই বাড়ির কর্তা চরিত্র হলেন সোবহান সাহেব।যিনি ২ বছর হলো ওকালতি থেকে রিটায়ার্ড হয়েছেন। এখন তিনি দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকেন সবসময়। যেমন, দেশে মাছের সংকট হবে ভেবে তিনি সবার জন্য এক বছর মাছ খাওয়া বন্ধ করার চিন্তা শুরু করেন আবার ক্ষুধা বুঝার জন্য না খেয়ে থাকা শুরু করেন।তার এই অদ্ভুত কাজ গুলো উপন্যাসটাকে অসাধারণ একটা মাত্রা যোগ করেছে।
সোবহান সাহেবের দুই মেয়ে, বিলু এবং মিলি। বিলু বরিশাল মেডিকেলে পড়ে এবং মিলি ইকোনোমিক্সে অনার্স করছে। দুই বোনই অসাধারণ বুদ্ধিমতি। তাদের মা মিনু বেগম। মিলির মামা ফরিদ, সারাদিন তার একটাই কাজ মুভি দেখা। তার স্বপ্ন হলো মুভি তৈরি করা। তার অন্যতম সহযোগী হল কাদের। কাদেরের সাথেই সে সবকিছু আলোচনা করে। রহিমার মা এবং কাদের তাদের বাসায় কাজ করে।
ভাড়াটিয়া আনিস এবং তার দুই সন্তান টগর এবং নিশো। তাদের মা নেই। কাজেই আনিস সাহেব খুবই হিমশিম খান তাদের সামলাতে। এমন কোন দুষ্টুমি নেই যা তারা করেনা। আগুন নিয়ে খেলার সময় বিছানার চাদর এবং পর্দায় আগুন লাগিয়ে নেবানোর চেষ্টা করা। নকল করা খেলায়,বড়রা যা বলে তারাও তাই নকল করে।এছাড়াও দর্জি দর্জি খেলে সব কিছু কেটে কুচি কুচি করা।এমন আরো অনেক খেলা রয়েছে তাদের।
সদ্য ডাক্তারী পাশ করা মনসুর, গ্রিন ফার্মেসি নামে একটি ফার্মেসি তে বসে। একটি ঘটনায় মিলি তার ফার্মেসিতে যায়,সেই থেকেই তাদের দেখাদেখি শুরু হয়। নানা অজুহাতেই মনসুর তাদের বাড়িতে যায়, এরপরই সে উদ্ভট আচরন শুরু করে। যেমন কয়েকবার সে মিলির বাবার প্রেশার মাপতে যায় তারা খবর না দিলেও, গিয়ে দেখে প্রেশার মাপার যন্ত্রই আনেনি, পরক্ষনেই সিড়ি দিয়ে নামার সময় সে পড়ে যায়।জ্ঞান ফেরার পর সবার দিকে তাকিয়ে উদ্ভট হাসি দেয়। সে এতটাই বিচলিত হয়ে পড়ে যে কি করবে বুঝতে পারে না।যতবারই তার চরিত্রটি উপন্যাসে এসেছে ততবারই আমি না হেসে থাকতে পারি নাই। অসম্ভব সুন্দর লেগেছে আমার এই চরিত্র টি।
গ্রাম থেকে আসে খন্দকার এমদাদ সাহেব এবং তার নাতনী পুতুল। এমদাদ সাহেবের ইচ্ছা তার নাতনী কে মনসুরের সাথে বিয়ে দিবেন। পুরো গল্পে এমদাদ সাহেবের চরিত্রটাই হলো স্বার্থান্বেষী। আর তার কারনেও মিলি ও ডাক্তারের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়। তবে আমার মনে হয় তার কারণেই তাদের মিলি আর মনসুর এর শুভ পরিনয় হয়। কারন তারা দুই জন তো তাদের ভালোবাসার কথা প্রকাশই করতে পারছিল না। তাই এমদাদ সাহেব এর চরিত্রটি একটু নেগেটিভ হলেও খারাপ নয়।
এই দিকে ফরিদ এর বাবার রেখে যাওয়া টাকা দীর্ঘ দিন পর সব মিলিয়ে বিশাল একটা এমাউন্ট হয়ে গেছে এটা যখন সে সুবহান সাহেবের কাছে শুনলো সে তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো এবং এই হঠাৎ বড় লোক হওয়া তার অশান্তির কারন হলো। শেষে অবশ্য আনিস এই টাকা খরচ এর সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন সেটাই উপন্যাসের শেষে জানা যায়।
গল্পের শেষে খুব সুন্দরভাবেই দুটি সম্পর্কের মিলন ঘটে। সেই সাথে ফরিদ তার শান্তি ও ফিরে পায়।এটা জানার জন্য বইটা পড়তে হবে। সত্যি বলতে এই উপন্যাস পড়ে অসম্ভব ভালো লেগেছিল আর খুব হাসি পেয়েছিল কিছু কিছু জায়গায়। সব মিলিয়ে হুমায়ুন আহমেদ স্যার পাঠকের মনে একটা তৃপ্তি এনে দিতে পেরেছেন এটা আমি বিশ্বাস করি।
ধন্যবাদ
0 Comments