Recents in Beach

ডেভিড কপারফিল্ড চার্লস ডিকেন্স


রূপান্তরঃএ.টি.এম. শামসুদ্দিন
চার্লস ডিকেন্সের আরো একটি অমর সৃষ্টি ডেভিড কপারফিল্ড।এক কথায় অসাধারণ একটা গল্প।ডেভিড এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র।যে কিনা জন্মের ৬ মাস আগেই তার বাবাকে চিরতরে হারান।
যেদিন তার জন্ম হয়েছিল সেদিন বিকালে তাদের বাড়িতে আসেন ডেভিড এর বাবার ফুফু মিস ট্রটউড।ডেভিড এর মা বলতেন মিস বেটসি। তার বাবা ছিলেন উনার প্রিয় ভাইপো কিন্তু ডেভিড এর বাবা তার চেয়ে বিশ বছরের ছোট মেয়েকে বিয়ে করায় মিস বেটসি কিছুটা রাগান্বিত ছিল। ডেভিড এর জন্মের দিন মিস বেটসি এসেছিলেন মেয়ে হলে তার ধর্ম মা হবার প্রত্যাশা নিয়ে।কিন্তু ডেভিড মেয়ে না হয়ে ছেলে হওয়ার কারনে মিসেস বেটসি তাকে আর তার মাকে ফেলে নিজ গন্তব্যে চলে যান।আর কখনও তিনি যোগাযোগ করেন নি।
ডেভিডের যখন ৮ বছর বয়স তখন তার মা মিস্টার এডওয়ার্ড মার্ডস্টোনকে বিয়ে করেন।সে ছিল ধূর্ত, নিষ্ঠুর ও প্রতারক।কিছ বুঝতে শেখার আগেই মায়ের জীবনে দেখতে পেল অচেনা একলোক কে।ছোট্ট ডেভিড কিছু তেই তা মেনে নিতে পারছিল না যে মি মার্ডস্টোন হলেন তার সৎ বাবা।আর তার জন্যই ধীরে ধীরে তার মায়ের ভালোবাসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছিল।সৎ বাবা ডেভিডকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতো স্বয়ং তার মায়ের সামনে কিন্তু মা ছিল অসহায়!ডেভিডের সে সময় খুব কাছের একজন হয়ে উঠে পেগোটি( ডেভিডদের বাড়ির কাজের লোক)।
কিছুদিন পরেই মিস্টার মার্ডস্টোনের সঙ্গে তাঁর বোন জেনও ডেভিডদের বাড়িতে এসে বসবাস শুরু করেন।আর তখন ডেভিড এর সাথে সাথে তার মায়ের জীবনও যেন আরও বেশি দুঃসহ হয়ে উঠে।ডেভিড এর মা যে মস্ত একটা ভুল করেছেন তা তিনি নিজেও বুঝতে পারেন কিন্তু তবুও তিনি নিরবে সব কিছু সহ্য করে যেতে থাকেন।ডেডিড এই দু'জনকেই অপছন্দ করত আর তা তার ব্যবহারে স্পষ্ট বোঝা যেত।আর তাই তো প্রায় তার কপালে বিভিন্ন দূঃর্ভোগ নেমে আসতো।আর তাই তো এক সময় ডেভিড পড়াশুনার ভালো থাকলেও একটু একটু করে পড়াশোনায় পিছিয়ে যেতে থাকে।আর পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়লেই মিস্টার মার্ডস্টোন ডেভিডকে মারধর করতেন।আর একদিন এইরকম মারধর করার সময় একবার ডেভিড তাঁকে কামড়ে দেয়। তারপরই ডেভিডকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সালেম হাউস নামে একটি বোর্ডিং স্কুলে। এই স্কুলের হেডমাস্টার মিস্টার ক্রিকল খুব কড়া মেজাজের লোক ছিলেন। এখানেই জেমস স্টিয়ারফোর্থ ও টমি ট্র্যাডলস নামে দুটি ছেলের সঙ্গে ডেভিডের বন্ধুত্ব হয়। উপন্যাসের পরবর্তী অংশে এই দুটি চরিত্রের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
হঠাৎ একদিন চিঠি এল মায়ের।ডেভিড ফিরে গেল বাড়িতে তার ছুটি কাটাতে।এবং গিয়ে দেখল মায়ের কোলে ছোট্ট একটি শিশু।খুব খুশি হলো ডেভিড কিন্তু মি মার্ডস্টোন ও তার বোনের আগমনে সব আনন্দ যেন তার ম্লান হয়ে যেত।১০ বছর বয়সে বোর্ডিং এ থাকা কালিন একদিন হঠাৎ জানতে পেল ডেভিড যে তার মা ও ছোট্ট ভাইটা মারা গেছে।কিভাবে কি হলো কিছু ই বুঝল না ডেভিড।
এর পর তার সৎ বাবা তার পড়াশোনা বন্ধ করে দিলো এবং তাকে পাঠানো হলো লন্ডনের এক মদের কারখানায় কাজ করতে।মিস্টার মার্ডস্টোন নিজে ছিলেন ওই কারখানার যৌথ মালিক।দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল কষ্টেই কিন্তু কারখানার মালিক মিস্টার উইলকিনস মিকাওবার দেউলিয়া হয়ে ডেটার'স প্রিজনে বন্দী হন। বেশ কয়েক মাস পরে ছাড়া পেয়ে তিনি চলে যান প্লাইমাউথে। এর পর লন্ডনে ডেভিডের দেখাশোনা করার আর কেউ থাকে না।তখন আবার সে সৎ বাবার হাতে অত্যাচারিত হতে চায় না আর তাই সে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
সর্বস্ব খুইয়ে ডেভিড হাঁটতে হাঁটতে লন্ডন থেকে চলে আসে ডোভারে।ডেভিড তার এই দাদি সম্পর্কে পেগোটির কাছেই জানতে পারে।আর তাই সে কষ্টের দিনে একমাত্র এই আপন মানুষটার কাছেই আসে।এবং অনেক কষ্টে সে সেখানে মিস বেটসি ট্রটউডকে খুঁজে পায়।সে ডেভিড এর কাছে তার কষ্টে কথা শুনে খুব দুঃখ পায়।আর তাই তো ডেভিডের এই দাদী মিস্টার মার্ডস্টোনের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও ডেভিডকে লালন পালন করার দায়িত্ব নেন। তিনি ডেভিডের নামটি পালটে রাখেন 'ট্রটউড কপারফিল্ড', সংক্ষেপে 'ট্রট'।অল্প দিনেই ডেভিড তার মন জয় করে ফেলেছিল।মিসেস বেটস তাকে পেয়ে খুব খুশি।নিজের সন্তানের মত ডেভিডে দেখাশোনা করে ওভালবাসা ।ডেভিড এর জীবনটা যেন একটু একটু প্লাটাতে শুরু করল।
এরপর ধীরে ধীরে ডেভিড তার এই দাদির তত্তাবধানে বড় হয়ে ওঠে।এরই মধ্যে ডেভিড বড় হয় এবং অনেক মানুষ এর প্রবেশ ঘটে উপন্যাস এর মধ্যে।এদের মধ্যে অন্যতম হলেন ডেভিডের মায়ের প্রাক্তন সেই বিশ্বস্ত দাসী পেগোটি ও তার পরিবারবর্গ।পেগোটির পিতৃমাতৃহীন ভাইঝি 'ছোট্ট এমলি'ও তাদের সঙ্গে আসে।এই মেয়েটিকে খুব পছন্দ হয় ছোট ডেভিডের।
ডেভিড পড়াশুনা শিখল।প্রোক্টর হওয়ার জন্য ট্রেনিং ও নিচ্ছিল মি উইকফিল্ড এর পরামর্শে।সে তাদের বাড়িতে প্রায় যেত।আ্যগনেস ছিল উইকফিল্ডের মেয়ে।আর সেখানেই তার সাথে বন্ধুত্ব হলো।ডেভিড এর জীবনে আরো একজন এল তার নাম ডোরা।ডোকে ডেভিড ভালবাসে এবং বিয়ে ও করে কিন্তু কিছু দিন পর ডোরা অসুস্থ হয়ে মারা যায়।ডোরা এর সাথে কিভাবে পরিচয় হয় তা পড়ার জন্য বইটা পড়তে হবে।
এক সময় ডেভিড এর আবার তার সেই পুরনো বন্ধু স্টিয়ারফোর্ট এর সাথে দেখা হয়।এবং বড় হয়ে ডেভিড তার এই বন্ধুটিকে নিয়ে পেগোটির বাড়িতে যান।আর তখনই ডেভিডের রোম্যান্টিক অথচ আত্মকেন্দ্রিক বন্ধু স্টিয়ারফোর্থ এমলিকে ফুসলিয়ে তার সম্মানহানি করে এবং পরবর্তী তে তাকে অস্বীকার করে।এতে ডেভিড অনেক কষ্ট পায় এবং আত্মগ্রালানিতেও ভোগে।কারন এমলিকে তখন অবধি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এইভাবে ঘটে যায় উপন্যাসের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডিটি।
ঋণের দায় থেকে মুক্তি পাওয়া মিকাওবারকে আবার দেখা যায়। আর দেখা যায় দুষ্টু কেরানি উরিহ হিপকে। মিকাওবারের সাহায্যে ধীরে ধীরে হিপের বদমায়েশি ধরা পড়ে যায়।এবং ডেভিড এগনেসের বাবাকে আবার ঋণ মুক্ত করেন এবং তার সমস্ত সম্পত্তি আবার ফিরিয়ে দেন।এরপরে তার সবথেকে কাছের বন্ধু এবং হিতাকাংখী সংবেদনশীল অ্যাগনেসকে বিয়ে করেন।অ্যাগনেস তাকে চিরদিনই ভালবাসত। তাই তাদের বিবাহিত জীবন সুখের হয়।
ডেভিড এক সময় এমলিকে খুঁজে পায়।আর কিভাবে খুঁজে পায় এটা জানতে হলে বইটা পড়তে হবে।আমি আমার লেখায় তা লিখতে গেলে এই লেখা আরও অনেক বড় হবে।শেষে ডেভিড ড্যান পেগোটি মিসেস গামবিজ ও মিকাওবারদের সঙ্গে এমলিকে পাঠিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ায়।তারা সেখানে নিরাপদে জীবনযাপন করতে থাকে।
দ্বিতীয় বিয়ে করে ডেভিড অত্যন্ত সুখে জীবন যাপন করতে থাকে।কারণ অ্যাগনেস বরাবরই খুবই বুদ্ধিমতী ও স্থির একজন মানুষ ছিলেন আর তিনি ডেভিড কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন।ডেভিড ও অ্যাগনেসের মোট তিনজন সন্তান,একজন ছেলে আর দুজন মেয়ে হয়েছিল।তাদের মধ্যে একটি মেয়ের নাম বেটসি ট্রটউড অপরটির নাম ডোরা।যারা সারাঘর ছোটাছুটি ও হইছই করতে থাকে। তার দাদির বয়স আশি।চোখে চশমা লাগিয়ে আমার মেয়ের সাথে সারাদিন সময় কাটাতে থাকে। তিনি শেষে আসল বেটসি ট্রটউড কে পেলেন, মানে ডেভিড এর মেয়ের ধর্ম মা। বুড়ো পেগোটিও থাকেন তাদের সাথে।শেষ পর্যন্ত স্থির হতে পারে ডেভিড।
এই বইটা মুলত চার্লস ডিকেন্স এর আত্মজীবনী মুলক একটা বই।অসাধারণ একটা বই।বইটা পড়লে যে কারও অনেক ভালো লাগবে।আর সেই সাথে নিজের জীবন পরিচালনা করারও একটা দিক নির্দেশনা পাওয়া যাবে। ডেভিড এর জীবনে অনেক উত্থান পতন এসেছে কিন্তু সে সব গুলো স্থির থেকে মোকাবেলা করেছে। আর তাই দিন শেষে সফলতা ও ভালোবাসা এবং সুখ শান্তি সব কিছুই পেয়েছে।
ধন্যবাদ




Post a Comment

0 Comments