Recents in Beach

চরিত্রহীন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৯০০ শতাব্দীর প্রথম দশকের বাংলা সমাজের পটভূমিকায় এই উপন্যাসটি রচিত। উপন্যাসটিতে চারটি নারী চরিত্র রয়েছে। প্রধান দুটি নারী চরিত্রের নাম সাবিত্রী ও কিরণময়ী। ছোট দুটি নারী চরিত্রের নাম সুরবালা ও সরোজিনী।প্রথমের দুই চরিত্রহে (চরিত্রহীন) হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।এটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে চার চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সাবিত্রী চরিত্রটি চরিত্রহীন মনে হলেও এই চরিত্রটিকে অত্যন্ত বিশুদ্ধ দেখানো হয়েছে,সে তার ভালবাসার মানুষ সতীশ-এর প্রতি অনুগত।কিন্তু সে বিধবা এবং কুলহারা বলে কখনও সে সতীশ এর কাছে তার ভালোবাসা কথা প্রকাশ করে না।সাবিত্রী চরিত্রটিকে লেখক অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।যতবারই তার সম্পর্কে পড়েছি আমি তার ধৈর্যে মুগ্ধ হয়েছি।
সুরবালা উপেন্দ্রনাথের স্ত্রী। তিনি বয়সে তরুণ, ধর্মীয় গ্রন্থগুলিতে অন্ধবিশ্বাসের কারণে তার চরিত্রও চিত্তাকর্ষক।সুরবালা আর উপেন্দ্র এর ভালোবাসা ও খুনসুটি গুলো আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।আর তাই স্ত্রী মারা যাওয়ার ৬ মাস যেতে না যেতেই উপেন্দ্রনাথ ইহলোকে ত্যাগ করেন।
সরোজিনী পাশ্চাত্য শৈলীতে শিক্ষিত এবং চিন্তা-ভাবনায় অগ্রসর কিন্তু পারিবারিক পরিস্থিতিত এবং একটি জাদরেল মা দ্বারা তার জীবনযাপন অবরুদ্ধ। সরোজিনী শেষতক সতীশকে বিয়ে করেন।তার একসময় সতীশ এর সাথে সম্পর্কে উন্নতি হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা বিয়ে অবধি গড়ার। সব মিলিয়ে অসাধারণ লেগেছে সরোজিনী এর চরিত্রটি।
উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র কিরণময়ী। তরুণ এবং অত্যন্ত সুন্দরী, বুদ্ধিমতী। তবে তার আবেগ ও আকাঙ্ক্ষাগুলি সর্বদা বিবাহিত বিষয়গুলির তুলনায় স্বামী কাছে শিক্ষা গ্রহন করার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় এবং স্বামী ও শাশুড়ীর দ্বারা সর্বদা দমিত হয়।কিন্তু অসুস্থ স্বামীর মৃত্যুর পরে সব কিছু বদলে যায়।
কিরণময়ী এক সময় গিয়ে উপেন্দ্র এর প্রেমে পড়ে। আর সেখান থেকেই সব ঝামেলার শুরু হয়।আর তাই তো এক সময় প্রতিশোধ পরায়ন বা ভালোবাসার জন্য উপেন্দ্র এর ছোট ভাই দিবাকর কে নিয়ে দেশ ছাড়া হন।দিবাকরের প্রতি কিরণময়ী এর কোন ভালোবাসা ছিল না। শুধুমাত্র উপেন্দ্র কে শাস্তি দিতেই তিনি এই কাজ করেছিলেন।কারন তিনি জানতে দিবাকর উপেন্দ্র এর পরম স্নেহের পাত্র ছিলেন।
তিনজন পুরুষ চারজন নারীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় তাদের কর্ম নারীদের জন্য ক্ষতিকর ও কষ্টদায়ক হয়।কিন্তু সে সময় পুরুষ শাসিত এ সমাজের সেটাই যেন ছিল নিয়ম।তারা অর্পিত, অবিচ্ছেদ্য এবং তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে নয়।
উপেন্দ্র প্রথমে কিরণময়ীকে সাহায্য করতেন, কিন্তু দীবাকরের সাথে তার সম্পর্কের সবচেয়ে খারাপ দিকটি মনে করে এবং আসলে দীবাকরের সাথে কিরণময়ীর বাধ্যতামূলক অংশীদার হয়ে ওঠে।দীবাকর দুর্বল-নিখুঁত এবং অপ্রতিভ।দিবাকর অনাথ ছিল কিন্তু সে উপেন্দ্র এর পরম স্নেহের ছিল। আর তাই তিনি এই ঘটনায় সব চেয়ে অধিক কষ্ট পান।
উপেন্দ্র এর মৃত্যুর পূর্বে যখন সরোজিনী ও সতীশ এক হয় এবং কিরণময়ী কে তিনি তাদের দেখে রাখতে বলপন।এতে করে সমাজের যে একটা অসংগতি ছিল তাই যেন বিছিন্ন হয়।মোটকথায় অসাধারণ একটা উপন্যাস। অনেক আগে পড়েছি তাই যতটুকু মনে আছে সেটাই নিজের মত করে লেখার চেষ্টা করলাম।
ধন্যবাদ


Post a Comment

0 Comments