লরারা ইন্ডিয়ান টেরিটরির লগ-হাউজ থেকে অনেক দূর চলে এসেছে। মিস্টার হ্যানসন নামের একজন ব্যক্তি বাড়ি বিক্রি করে পশ্চিমে যেতে চায়।লরার বাবা এই প্লাম ক্রীকের তীরের এই বাড়িটি মিস্টার হ্যানসনের কাছ থেকে নিয়ে বসতি করতে চায়।তার দুটো ঘোড়া,একটা ঘোড়ার বাচ্চা আর ওয়্যাগের কভারের বদলে তারা একটা মাটির বাড়ি, দুটো বলদ ও চাষের জন্যে জমি পেল।তারপর শহরে গিয়ে কাগজপাতি ঠিক করে নিয়ে এসে তারা এখানেই বসতি নির্মান করলো।কিন্তু ঘোড়া দুটোকে দেওয়ায় লরা খুব কষ্ট পায়।তখন তার বাবা ফসল বিক্রি করে ঘোড়া কিনে দেওয়ার কথা বলে।
খুব ভালোই দিন যেতে শুরু করলো এখানে তাদের। কোন বণ্য জন্তুর চিন্তা নেই।আর শহরও কাছেই এবং চাষাবাদের জমিও অনেক ভালো। আর তাই ভালোভাবে চাষ করতে পারলে তারা বড় লোক হয়ে যাবে।এভাবেই চিন্তা করে নতুন করে জীবন শুরু করলো এই খালের পারে। আর সেই সাথে নেলসন নামের একজন ভালো প্রতিবেশও পেল তারা।একসময় নেলসনের খামারে কাজ করে লরার বাবা একটা গরুও পেল।
এর মধ্যে লরার বাবা ক্রিসমাসে মেয়েদের খুশি করতে ঘোড়ার নিয়ে এলেন ক্রিসমাস গিফট হিসাবে। মোটামুটি ভালোই দিন যাচ্ছিল তাদের। এর মধ্যে লরার বাবা শহর থেকে তক্তা নিয়ে এলো বাড়ি বানানো জন্য। চাষকৃত গম বিক্রি করে এই তক্তার টাকা শোধ করবেন তিনি।একদিন খুব সুন্দর একটা বাড়িও তৈরি হয়ে গেল।এবং এত সুন্দর বাড়ি দেখে লরা আর মেরি ও মহা খুশি।
এর মধ্যে লরা আর মেরি শহরে স্কুলেও যাওয়া শুরু করলো।এক সময় তাদের বেশ কিছু ভালো বান্ধবীও হয়ে গেল।শুধু নেলী নামে একটা মেয়ের সাথে তার ভাব হলো না।আর তাই নেলী যখন তাদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে লরা কে অপমান করলো।ঠিক সেটার শোধ নিতে লরাও ওকে নিয়ে এসে খেলার চলে খালে নিয়ে গিয়ে কাঁদায় টেলে দিয়ো পায়ে জোখ ধরালো।আর নেলীর লাফালাফি দেখে সবাই খুব মজা পেল।স্কুলে লরা আর মেরি মনোযোগ দিয়েই পড়াশুনা করতে থাকলো।তাদের স্কুল যাওয়ার প্রথম দিনের ওটা আর স্কুলের দুষ্ট মিষ্টি ঘটনা গুলো পড়তে পড়তে নিজের স্কুলের দিনেই চলে গেছলাম। মনে হলো লরা আর মেরির সাথে আমিপ স্কুল করতেছিলাম।
গল্প পড়তেছিলাম আর খুব ভালো লাগতেছিল।তার নিয়মিত শহরে যেত রবিবার করে গির্জা স্কুলে।রেভারেন্ড অ্যালডেনের সাথেও ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল।আবার এদিকে এবার লরা দের ফলনও খুব ভালো হয়েছে।আলু,শালগম,ভুট্টা, গম,গাজর সব কিছু অনেক ভলো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে তাদের এই ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর তাই লরার বাবা তার বুট কেনার তিন ডলার গির্জার ঘণ্টা কেনার জন্য দিয়ে এলো।ভাবলো কয়েকদিন পরেই তো গম বিক্রি করে অনেক টাকা পাবে তখন কিনে নিবে।
আমিও খুব মজা নিয়ে গল্প পড়তেছিলাম।কারণ আমিও লরা এর মত ভাবতেছিলাম এবার ফসল উঠলেন সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।আর আমি বার বার ভাবছিলাম এবার লরা দের কষ্টের আর অনিশ্চিত জীবন শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তখনই ঘটলো বিশাল এক অঘটন।গল্পের মাঝ খানে এমন কিছু হবে তা তো আমি ভাবিই নাই।
অঘটন টা হলো কোথা থেকে ঝাঁকে ঘাসফড়িং চলে আসলো।প্রথমে লরারা কিছুই বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছে। কারণ তারা এমন ঝাঁক বেঁধে পুরো সূর্যটাকেই প্রায় আরাল করে রেখেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা বুঝতে পারলো আসলে কি ওগুলো।তারপর চোখের নিমিষেই প্রেয়ারির সব সবুজ উধাও হয়ে গেল।লরাদের সব সবজিরও আর কোন অবশিষ্ট নেই। তার বাবা আর মা মিলে পুরো খড়ে আগুন লাগিয়ে ধোঁয়ার মাধ্যমে গম খেতকে আরাল করলো।এরই মধ্যে প্রেয়ারিতে সবুজ বলতে তারা আর কিছু দেখতে পেল না।লরার বাবা খেয়ে না খেয়ে সারারাত চেষ্টা করেও গম খেত বাঁচাতে পারলো না।চোখের নিমিষেই সব আশা ভেঙে গেল।সে সময়ও তারা হতাশ হলেন না।কষ্ট পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু তবুও বললেন এর থেকেও তো কঠিন সময় পার করেছে। এবারও ঠিক সামলে নিবো।
এভাবেই তারা আবার নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলো।লরার বাবা আবার চাষ করার জন্য জমির চাষ শুরু করলেন।এর মধ্যে লরা আর মেরির স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।কিন্তু জমি চাষ করতে গিয়ে লরার বাবা খুব অবাক হলেন। কারন মাটিতে পঙ্গপাল ডিম দিয়েছে যে একবিন্দু জায়গাও ফাঁকা নাই।তাই সেখানে কোন ভাবে চাষাবাদ হবে না এটা সবাই বুঝতে পারলো।সবার মনেই এক চিন্তা এবার কি হবে। কিন্তু লরার বাবা সবাই কে সান্ত্বনা দিলেন।বললেন আমাদের মাথার উপর তো থাকার মত একটা ছাদ আছে অনেকের তাও নেই। সবাই এতে অনেকটা আশ্বস্ত হলো।লরার বাবা এবারও বললেন ঠিক একটা ব্যবস্তা হবে।
এরপর তিনি শহরে গেলেন।এবং এসে খাওয়া শেষ করে বাইরে কাজে যাওয়ার কথা বললেন। পুবে ফলন অনেক ভালো হয়েছে এবং এই দিকে পঙ্গপালও যায় নি। আর তাই কাজ আছে ওই দিকে।প্রায় ২০০/৩০০ মাইল হেঁটে যেতে হবে। আর এছাড়া তাদের কাছে আর কোন উপায়ও ছিল না। এরমধ্যেই এক সকালে লরার বাবা চলে গেল।এর মধ্যে অনেক দিন চলে গেল কিন্তু লরার বাবার কোন চিঠি এলো না। প্রত্যেক সপ্তাহে গিয়ে মিস্টার নেলসনের কাছে খোঁজ নিতে থাকলো।কিন্তু খোঁজ আর পাওয়া যায় না। এভাবে অনিশ্চিত ভাবে তাদের জীবন কাটতে থাকলো।কিন্তু এর মধ্যে মিস্টার নেলসন ওদের মোটামুটি সাহায্য করতো। হঠাৎ একদিন লরার বাবার চিঠি এলো।চিঠির সাথে লরাদের জন্য ৫ ডলারও পাঠিয়ে দিয়েছিল। তারও বেশ কিছুদিন পর যখন শীত প্রায় আসছে তখন এক রাতে লরার বাবা ফিরে এলো।লরা বাবা কে দেখে খুব খুশি হলো।দুই মেয়ে বাবা কে পেয়ে কাছে চলে গেল।এই জায়গা টা পড়ে খুব আবেগ আপ্লূত হয়ে গিয়েছিলাম।এই সময়ের অনুভুতিটা আসলেও আমি বর্ণনা করতে পারবো না।
এর মধ্যে লরাদেরকে নিয়ে ওদের বাবা শহরে গেল।এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনলো।লরারা আবার সানডে স্কুল যেতে পারবে।মোটামুটি আবার একটু ভালো দিন আসলো।তারমধ্যেই ক্রিসমাস চলে এলো।এক সন্ধ্যায় বাবা মা লরা আর মেরি কে স্নান করে সবচেয়ে ভালো জামাকাপড় পড়ে তৈরি হতে বললেন। দুই বোন খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চেয়েও কিছু জানতে পারলো না।তারপর তাদের নিয়ে শহরে গেল। এরপর গির্জায় গেল তারা।লরা আর মেরি সব কিছু দেখে খুব অবাক হলো।কারন এর আগে তারা এরকম কিছু দেখে নি।লরা, মেরি,ক্যারি সকলে অনেক গিফট পেল। লরার বাবা মা ও গিফট পেল। লরার জীবনের এটা সব চেয়ে ভালো ক্রিসমাস ছিল। লরা খুব খুশি হলো।
এরই মধ্যে শীত পেরিয়ে আবার গরম শুরু হলো।আবার পঙ্গপাল জীবন পেতে শুরু করলো।তাই লরার বাবা আবার পুবে কাজে চলে গেল। এর মধ্যে পঙ্গপালও সেখান থেকে চলে পশ্চিমে যাওয়া শুরু করেছি। অনেক দিন পর তারা যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।এবার আবার তারা আলু ও শালগম চাষ করেছিল।এরই মধ্যে গরমে আবার অনেক বড় একটা দূর্ঘটা ঘটে গেল।বনে আগুন লেগে যাওয়া নিমিষেই সেটা তাদের বাড়ির দিকে আসলো।সেবারও মিস্টার নেলসন তাদের সাহায্য করলো।বারবার পড়তেছিলাম আর ভাবছিলাম তাদের যেন বিপদ ছাড়ছেই না।এরমধ্যে শীত নেমে এলো তারা আলু আর শালগম ঘরে তুললো।ফলন অনেক ভালো হয়েছে।পুরো শীতকাল খেয়েও তারা এগুলো শেষ করতে পারবে না।
এরমধ্যে লরার বাবা ফিরে এলো। বাবা কে দেখে লরা ও মেরি ভিষণ খুশি। এরমধ্যে লরার বাবা শিকার করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই পেল না।একসময় খুব নিরাশ হলো।এবং লরার মাকে বোঝাতে চেষ্টা করলো এখানে শিকার নেই কিছু নেই তিনি এখানে থাকতে চান না। কিন্তু লরার মা তাকে বোঝালেন।তখন তিনি আর সে বিষয়ে কিছু বললেন না। এর মধ্যে তুমুল ঝড় বৃষ্টি শুরু হলো।একদিন ঝড় একটু থামলো তখন লরার বাবা শহরে কিছু কেনা কাটা করার জন্য যেতে চাইলো।প্রথমে কেউ যেতে দিতে চাইলো না কিন্তু তারপর তিনি চলে গেলেন।কিন্তু সেই মানুষ আর ফিরে আসেন না।এরপর চারদিন টানা ঝড় হলো।সবায় খুব দুশ্চিন্তা করছে। তবুও লরার মা তাদের স্বান্তনা দিয়ে গেলেন।এবং একদিন ঝড় একটু থামলে লরার বাবা ফিরে এলো।বরফের মত জমে যাওয়ার অবস্থা।তারপর গা শেখে এবং গরম সুফ খেয়ে অনেকটা ভালো অনুভব করলেন।তারপর সব কিছু খুলে বললেন।তিনি আসলে সেদিন শহরে গিয়েছেন ক্রিসমাস উপলক্ষে লরা আর মেরির জন্য লজেন্স কিনতে। কিন্তু চারদিন ঝরের কারনে আটকা পড়ে নিজেই সেই লজেন্স খেয়ে ফেলেছেন।এতে লরা আর মেরি একটু দুঃখ পেল না। বরং খুশি হয়ে বললো ভালো করেছো বাবা।
লরার বাবা শহর থেকে শুনে এসেছে এবার পঙ্গপালও হবে না আর চাষও অনেক ভালো হবে। এটা শুনে সকলে খুশি হলে এবং রাতের খাবার খেয়ে শুতে চলে গেল।আর এখানেই এই গল্প শেষ হলো।লরা আর মেরিরা যেমন নতুন স্বপ্ন নিয়ে শুতে গেল ঠিক তেমনি আমিও এখন স্বপ্ন দেখছি। এবার হয়তো আর কোন বিপদ হবে না সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। গল্প টা আমি যত পড়ছি তত মুগ্ধ হচ্ছি। আমাদের জীবনে একটু সমস্যা হলে আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি এবং হতাশ হয়ে যাই।আর এই গল্প যত পড়ছি ততই বুঝতে পারছি বিপদের সময় স্থির থেকে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সব কিছু মিলে অসাধারণ একটা গল্প। এখন আমি নেক্সটে কি হবে তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা করছি।
0 Comments