Recents in Beach

আমি তপু মুহম্মদ জাফর ইকবাল

এটা আমার অসম্ভব প্রিয় একটা বই।অনেক বছর আগে পড়েছিলাম তখন এই বই সম্পর্কে কিছু লেখা হয় নি। তাই আজ আবার পড়লাম।তখনও বইটা পড়ে কেঁদেছিলাম আর আজকেও কাঁদলাম।আর সাথে অনেক অনুপ্রেরণাও পেলাম।তাই এখন এই বই সম্পর্কে কিছু লেখার চেষ্টা করছি।

গল্পের মুল চরিত্র হলো তপু।সে এখন ক্লাস এইটে পড়ে।তার বয়স তের বছর কিন্তু নিজেকে তার চল্লিশ বছরে কাছাকাছি বুড়ো মনে হয়।কারণ তিন বছর আগে তার বাবা মারা যান।তার মনে হয় এই তিন বছরে তার বয়স প্রায় ৩০ বছরের মত বেড়ে গেছে।
তার বাবা এক্সিডেন্টে হয়ে মারা যায় তপুর ক্রিকেট ব্যাট কিনতে গিয়ে।সাথে তবুও ছিল কিন্তু তার কিছু হয় না।কিন্তু তপুর বাবা এক্সিডেন্ট স্পটেই মারা যান। আর তার জন্য তপুর মা তপুকেই দায়ি মনে করতে থাকেন। এবং তার পর থেকেই তিনি আর তপুকে সহ্য করতে পারতেন না।
তিন ভাই বোনের মধ্যে তপু ছিল সবার ছোট আর খুব আদরের।কিন্তু হঠাৎ করেই যেন তার পুরো পৃথিবী বদলে গেল।যে তপুর উপর কেউ কোন দিন একটু উচ্চ স্বরে পযর্ন্ত কথা বলতো না। সেই তপুকে তার মা জানোয়ার পরে লাগি দিতেছে এবং শেষে তাকে গ্লাস দিয়ে ছুড়ে মারে এতে করে সে মাথায় আঘাত পায়।প্রথমে তার কাছে সব কিছু স্বপ্নের মত মনে হতে থাকে।সে ভাবে হয়তো আব্বু মারা যাওয়াতে আম্মু অনেক কষ্ট পাইছে তাই এমন করছেন।কিন্তু সেই ব্যবহার আর কোন দিনও ঠিক হয় না।
তপুর মা কিছু হলেই তাকে অসম্ভব মারতো।প্রথম প্রথম তার ভাই বোন তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতো।তাতে করে তাঁর মা আরও বেশি ক্ষেপে যেত এবং আরও বেশি পিটাইত।তাই একসময় তার ভাই বোন রাও এটা মেনে নিল এবং চুপচাপ থাকতো।এভাবেই চলতে থাকলো।
তারপর শুরুতে তার মা তাকে সহ্য করতে পারতো না বলে সে তার মা এর থেকে দূরে দূরে থাকতো।তার না তার ভাই ও বোনকে নিয়ে এক টেবিলে বসে খেতেন।আার সে অন্য রুমে খেত।একসময় সেই খাবারও বন্ধ হলো।বাড়ির কাজের মেলে দুলি খালা যা খেত তাই হলো তপুর খাবার।এক সময় আর ঘরেও তার জায়গা হলো না।জায়গা হলো বাড়ির স্টোর রুমে।এখানে তার দিন অতিবাহিত হতে শুরু করলো।
যে তবু একদিন ক্লাস এর ফাস্ট বয় আর ভদ্র ছেলে ছিল এবং ডিবেট ও কবিতা আবৃতি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছিল সেই তপু এখন কোন রকমে পরীক্ষায় পাশ করে।এখন তার কোন বন্ধুও নাই।এখন তার বন্ধুরা তাকে ভয় পায়।কারন সবাই এখন তাকে একটা বখে যাওয়া ছেলে ভাবে।তাই তার সাথে কেউ কথা পর্যন্ত বলে না।তিন বছরে তার জীবন পুরোপুরি বদলে যায়।
সে অনুভব করে তার এই পৃথিবীতে কেউ নেই তার। সে সম্পূর্ণ একা।প্রথম প্রথম আত্মহত্যার কথাও ভাবতো।অনেক বার ওভার ব্রিজে গিয়ে দাঁড় হয়ে থাকতো এবং কোন গাড়ি এলে লাফ দেওয়ার কথা ভাবতো।কিন্তু আত্মহত্যার জন্য যথেষ্ট সাহস এর দরকার আছে যা এই ছোট্ট তপুর ছিল না।তাই সেটা সে আর শেষ অবধি করতে পারে নি।এর অবশ্য একটা কারন দুলি খালাও ছিল।যে এই খারাপ সময়ে একটু হলেও তার পাশে ছিল।
তাই সে একদিন ভাবলো আত্মহত্যা করা তো কঠিন কিন্তু বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া তো সহজ। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল সে হুট করে একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে। বেশি ভেবে চিন্তে পালানো যায় না তাই সে চিন্তা করলো কোন একদিন বাড়ি থেকে বের হবে আর কোন দিন ফিরে আসবে।একদিন সে বাড়ি থেকে পালানোর চিন্তা করে বাড়ি থেকে বের হয়েছে।হঠাৎ তার কি যেন মনে হলো যে পালিয়ে যাওয়ার আগে একবার স্কুলে ঘুরে যাই।এই ভেবে সে আর স্কুলে গেল। গিয়ে তার বসার জায়গায় একটা মেয়েকে দেখে অবাক হলো।সে মেয়েটাকে চিনলো না।কারণ মেয়েটা নতুন এসেছে। তাই সে মেয়েটিকে গিয়ে বললো এখান থেকে ওঠো এবং সামনে গিয়ে বসো।মেয়েটা কারন জানতে চাইলে বললো যে মেয়েরা সামনেই বসে।কিন্তু মেয়েটি তার কথা শুনলো না।সে মেয়েটির উপর রাগ করলেও যেন মেয়েটি তার কথা শুনলো না। একই জায়গায় বসে রইলো এবং মুখে হাসির একটা ছাপ।তপু এতে আরও বিরক্ত হলো।তাই সে রাগ করে মেয়েটির বই খাতা সব ফেলে দিলো রাগ করে। এতে মেয়েটি ভদ্র ভাবে তপুকে বললো যে সরি বলো তাহলে সে তার জায়গা ছেড়ে দিবে এবং এও বললো যে আমি প্রথম এসেছি তোমাদের স্কুলে আর তুমি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে।আমি কিন্তু কষ্ট পেয়েছি।তপু রাগ করে বাইরে চলে গেল।সে ভাবলো ক্লাসে এসে দেখবে প্রিংকা অন্য কোথাও বসেছে কিন্তু সে এসে দেখে প্রিংকা একই জায়গায় আছে শুধু একটু সরে বসেছে।এতে করে তপু খুব অবাক হলো।
এরই মধ্যে ক্লাসে বাংলার স্যার ঢোকেন।তিনি কখনও মুক্তি যুদ্ধের অবদান স্বীকার করতেন না এবং ক্লাসে কখনও মুক্তিযুদ্ধ ও রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে পড়াতেন না।এবং এসব নিয়ে কটু কথা বলতেন।তাই ছাত্রছাত্রীরা তাকে রাজাকার স্যার বলে ডাকতেন। তিনি ক্লাসে পেছনে ছেলেদের পাশে প্রিংকা কে দেখে অবাক হলেন এবং তাকে সামনে আসতে বললেন।কিন্তু প্রিংকা সামনে না গিয়ে বললেন পেছনে বসে থাকতেই তার ভালে লাগে এবং সে খুব ইন্ট্রাসটিং ফিল করে।এতে স্যার ক্ষেপে গিয়ে বললেন যে স্কুলে ইন্ট্রাসটিং জিনিস দেখতে এসেছে নাকি পড়াশোনা করতে এসেছে। এতে প্রিংকা ভয় না পেয়ে খুব সুন্দর ভাবে বললো যে ইন্ট্রাসটিং ওয়েতে পড়াশোনা করতে এসেছি। এতে করে রাজাকার স্যারের মেজাজ টা আরও খারাপ হলো।এবং তিনি এটেনডেন্স নিয়ে পড়া ধরা শুরু করলেন। এবং সবাই বুঝতে পারলো যে আজ কপালে দুঃখ আছে। কারন তার রাগ উঠলে তিনি প্রচন্ড মারেন।আজকেও তাই হবে।তাই যখন ক্লসের এক ছেলে পড়া পাড়লো না তাকে অসম্ভব পিটাতে শুরু করলো।তখন প্রিয়াংকা গিয়ে ছেলেটার সামনে দার হলো এবং স্যারকে মারতে নিষেধ করলো।এবং স্যারকে অনেক কথা বললো এই সময় তপু প্রিংকা কে খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করলো। এবং ভাবলো মেয়েটা একটু অন্য রকম।তার পর স্যারের সব রাগ গিয়ে পড়লো প্রিয়াংকার উপর।এবং সে যখন প্রিংকা কে মারতে যাবে সেই সময় তপু বললো ওকে মারবেন না।তার কথাটা যেন হুমকির মত শোনালো। এতে করে স্যার একটু ভয় পেলেন কারণ তপুর চেহারায় তখন একটু এমন হয়ে গেছে।পড়ে স্যার ক্লাস নিয়ে চলে গেলেন। এবং প্রিংকা অপুকে ধন্যবাদ দিলেন।তপু সেদিন খুব খুশি হয়েছিল কারন অনেক দিন পর কেউ তার সাথে এমন ভালো ভাবে কথা বলেছিল।
সেদিন তপু তার পালিয়ে যাওয়া ক্যান্সেল করলো।ভাবলো আর কয়টা দিন পরে পালালেই হবে।কিন্তু পরদিন স্কুল আসার পরে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম তাদের ডেকে পাঠালেন।তাদের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে বাংলা স্যার নালিশ করেছেন।তারা গেল।সেখানেও বাংলা স্যার একই কাজ করতেছিলেন। তপু প্রথমে চুপ করে ছিল। ভাবলো প্রিংকা গুছিয়ে কথা বলে তাই ওই বলুক। কারণ সে কথা বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।কারণ তার কথা বলার অভ্যাস না থাকার কারণে ভালো কথাও হুমকির মতো শোনায়।কিন্তু যখন বাংলা স্যার তাকে বেয়াদব,পচা আপেল বললো আর টিসি দিতে বললেন। তখন তপুও বাংলা স্যার কে স্কুল থেকে বের করে দিতে বললো এবং পচা আপেল বললো।এতে করে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বিষন্ন হয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন। আর বাংলা স্যার খুব ক্ষেপে গেলেন।তপু ভাবলো আমি তো কয়েকদিন পর পালাবোই তাই যাওয়ার আগে ম্যাডামকে সব সত্যি কথা বলেই যাবো।তখন তপু এক নিঃশ্বাসে বাংলা স্যার সম্পর্কে সব বলে গেল। এতে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আরও অবাক হলেন এবং বাংলা স্যার আরও ক্ষেপে গেলেন। কিন্তু প্রিন্সিপাল ম্যাডাম তাকে চলে বললেন এবং কিছুক্ষণ পর তপু আর প্রিয়াংকা কেও ক্লাস যেতে বললেন।
এর পর দিন বাংলা ক্লাসে প্রিন্সিপাল ম্যাডান নিজে ক্লাসে এলেন। এবং রবীন্দ্রনাথ আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চমৎকার একটা ক্লাস নিলেন।সবাই মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে ম্যাডামের কথা শুনিতেছিল।রাজাকার স্যার এতদিন যেটা নষ্ট করার চেষ্টা করছিলেন ম্যাডাম যেন এক নিমিষেই তা ঠিক করে দিলেন।প্রিয়াংকা অপুকে বললো ম্যাডাম তোমার কথা গুলোর জন্য আজ এই ক্লাস গুলো নিলো।তখন আর তাদের বুঝতে বাকি রইলো না যে ম্যাডামও তাদের দলে।তাই রাজাকার স্যার আর তাদের কিছু বলতে পারলো না।
এরই মধ্যে এক রাতে তপুর খারাপ লাগতেছিল।বাইরে তার মা, ভাই বোন কথা বলতেছিলো।সেদিন সে হঠাৎ বাংলা বইটা বের করে বাংলা রবীন্দ্রনাথ এর কবিতা মুখস্ত করে ফেলে।তারপর সে চুপচাপ তার সেই স্টোর রুমে শুয়েছিল।অবশ্য এই স্টোর রুমে তার একটা বন্ধু ছিল।সেটা হচ্ছে একটা নেংটি ইদুর।যার সাথে তপু সব সময় কথা বলতো।প্রত্যেকদিন ঠিক ১০ টার সময় সেটা আসতো।আর তখন তপু তাকে এক বা দুই টুকরো রুটি খেতে দিতো।সেদিন ও ঠিক ১০ টায় ইদুর টি আসলো এবং সে রুটি দিলো।কিন্তু হঠাৎ যখন তপু হাত বাড়িয়ে দিলো তখন ইদুর টি পালিয়ে গেল। তখন তপুর মনটা একটু খারাপ হলো তাই সে গনিত নিয়ে চিন্তা কারা শুরু করলো।একসময় সে খুব ইন্ট্রাসটিং একটা গনিত নিয়ে চিন্তা কারা শুরু করলো। এবং সে সেটা খাতায় লেখা শুরু করলো।কিন্তু একদম শেষের দিকে এসে তার কলমের কালি শেষ হয়ে পড়লো। কিন্তু গনিত টা সলভ না করে তার আর ভালোও লাগছে না।এবং বাইরে তার মা থাকার কারনে ভাই বা বোনের কাছে গিয়ে কলম চাইতেও পারলো না। তাই ভাবলো সবাই ঘুমিয়ে গেলে চুপিসারে তার ভাইয়ের রুম থেকে নিয়ে আসবে।সবাই ঘুমালে সে তার ভাইয়ের রুমে যায় এবং টেবিল এর মধ্যে কোন কলম পায় না। কিন্তু হঠাৎ তার হাত লেগে কিছু একটা পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়। তপু ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়।তখন তার মা রুমে এসে বলে এই চোর কি চুরি করতে আসছিস।এবং তার ভইয়ের বেল্ট দিয়ে তাকে অনেক পিটায়।তারপর সে তার রুম সার্চ করে যখন তপুর পালিয়ে যাওয়ার জন্য জমানো টাকা পায় তখন তাকে আরও অনেক অনেক পিটায়।সেদিন তপু মার খেয়ে অনেক কেঁদেছিল।তার মনে হচ্ছিল বেল্ট যেন তার চামরা কেটে কেটে শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। তখন দুলি খালা তাকে বাচিয়ে নেয়।তপুর খুব জ্বর এলো এবং প্রচন্ড বেথায় তপু দুইদিন স্কুলে যেতে পারে নি।দুইদন পর সে স্কুল গেলে প্রিয়াংকা কেন স্কুল আসে নি তা জানতে চায় এবং তার গালে মারের দাগ দেখতে পেয়ে সেটার কথাও জিজ্ঞেস করে। কিন্তু তপু কিছু বলে না।প্রিয়াংকা তখন প্রিন্সাপাল ম্যাডাম আবার তাদের ক্লাস নিয়েছেন সেটাও বলে।তখন অপু শুধু চুপচাপ তার কথা শুনে আর উত্তরে ও ও বলতে থাকে।
এরই মধ্যে একদিন ক্লাসে গনিত স্যার ক্লাসে গনিত টেস্ট নিলো।এটাই তপুর সব চেয়ে পছন্দের বিষয়। সে গনিত বিষয় খুব পছন্দ করতো।তাই গনিত পরীক্ষায় সে সব অংক খুব ভালো ভাবে দিলো তবুও সে জিরো পেল।কারন তার মত একটা স্টুডেন্ট সব অংক কারেক্ট করতে পারে না। তাই সে কারও দেখে অংক করছে তাই তাকে জিরো দিয়েছে।কিন্তু ক্লাস শেষে প্রিংকা তার খাতা দেখতে চায় এবং বলে যে আমি পরীক্ষার সময় দেখেছি যে তুমি একা একা পরীক্ষা দিছো তাহলে সেটা তুমি স্যারকে বললে না কেন। তবুও বললো স্যার বিশ্বাস করতো না।তখন প্রিংকা বললো তপু তুমি একদিন অনেক বড় একজন গণিতবিদ হবি।
এরই মধ্যে তপু বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। কারণ এই বাড়িতে তার অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করলো।দুলি খালা সবই বুঝতে পারছিলেন যে তপু চলে যাচ্ছে তবুও তিনি কিছু বলছিলেন না।যাওয়ার সময় জোড় করে তপুকে কিছু টাকা দিয়ে দেন।তপু সেটা নিয়ে বের হয়ে যান।সে স্টেশনে চলে যায়। তার যেন কোন তারা নেই। কোথায় যাবে তাও সে জানে না। হঠাৎ করে যে কোন একটা ট্রানে উঠে পড়বে। উপরে বসতেও তার কোন সমস্যা নাই। হঠাৎ করে সে ভাঙা মতো একটা ট্রেনের উপরে উঠে বসে পড়লো।তখন সে হঠাৎ প্রিয়াংকাকে দেখতে পেল।দেখে খুব অবাক হলে।প্রিয়াংকা চিৎকার করে ওকে নেমে পড়তে বলছে। এরই মধ্যে ট্রেনের ইন্জিন চালু হয়ে গেছে। এখন যদি সে না নামে তাহলে পরে আর নামতেও পারবে না।তাই কোন কিছু না ভেবেই লাফ দিলো।এবং অনেক ব্যাথা পেল।আর তখন প্রিংকার জানে পানি এলো এবং সে তপুকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।তারপর সে তপুকে সব খুলে বললো যে সে কিভাবে ওখানে এবং দুলি খালা তাকে সব বলে দিয়েছে।তখন সে সেই ম্যাথ বইটা তপুকে দিয়ে বললো তোকে অনেক বড় ম্যাথমেটিশিয়ান হতে হবে। আর তাকে ছুয়ে কথা দিতে বললো যে সে যাতে আর কোন দিন না পালায়।অনেক দিন পর তপু খুব অবাক হলো যে কেউ তার জন্য এই ভাবে কাঁদছে।
তারপর থেকে তপু নতুন তপুকে আবিষ্কার করলো।প্রিয়াংকা সব সময় তাপুকে উৎসাহ দিতো।এবং তপু এখন পড়াশুনায় ও একটু একটু করে মন দিতে শুরু করলো।এরই মধ্যে বাড়িতে তাকে বলা হলো যে সে পরীক্ষায় পাশ না করলে তার পড়াশুনা বন্ধ করে দেওয়া হবে।এবং তার ভাই তার কাছ থেকে কাজ করে নেওয়া শুরু করলো।কাপড় স্ত্রি করা,জুতা পলিস করা এসব করতে বলতো।সে চুপচাপ এ গুলো করে যেতে লাগলো এবং তার যে এবাড়িতে নতুন আর এক জীবন শুরু হতে যাচ্ছে তাও সে বুঝতে পারলো।কিন্তু এই বারই প্রথম তার কাছে সব বই আছে।সেগুলো অবশ্য প্রিয়াংকাই ম্যানেজ করে দিছি।এরই মধ্যে একদিন সে বই পড়ছে তখন তার ভাই তাকে প্যান্ট স্ত্রি করতে বলে।তখন তার ভাই কারন যানতে চাইলে সে খুব সুন্দর ভাবে তা বলে।কিন্তু তপুর ভাই রেগে গিয়ে তার মা কে ডাকে এবং তপুর কথা বলে। তখন তপুর মা তাকে খুব মারে এবং তপুর ঠোঁট ফেটে যায়।তারপর তার মা তাকে প্যান্ট স্ত্রি করতে বলে চলে যায়।তখন তপু যাতে রক্ত প্যান্টে না পড়ে এমন সাবধানে প্যান্ট স্ত্রি করে দেয়। তখন তপুর ভাই বলে যে আমার কথা শুনলে কি এমন হতো তখন তপু রক্ত মাখা মুখে তার দিকে তাকায় এবং বলে যে সে তার কথা কোন দিন শুনবে না।যতবার সে এটা করবে ততবারই তাকে আম্মুকে দিয়ে মার খাইয়ে নিতে হবে। তপুর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার ভাই একটু ভয় পেয়ে গেল।পরে অবশ্য তাকে আর ওই কাজ করতে হয় নি।কিন্তু এতে তার কাজ কমে নি।তখন তাকে রান্না ঘরে দুলি খালা কে সাহায্য করতে হতো।কিন্তু সে রান্না ঘরের এই কাজটাকে খুব ইনজয় করতো।কারণ সে বিজ্ঞানের অনেক জিনিস দেখতে পেত সেখানে।
আগে এমন ঠোঁট বা মার খেলে তপু দুই একদিন স্কুলে যেত না। কিন্তু আজকে তা করলো না।সে ওই ফাটা ঠোঁট নিয়েই স্কুলে গেল।এবং প্রিয়াংকা দেখেই বুঝতে পারলো।এরই মধ্যে ক্লাসে একদিন গনিত অলিম্পিয়াড এর কথা বলা হলো।এবং ক্লাসের প্রথম তিনজন কে সিলেক্ট করা হলো।কিন্তু প্রিয়াংকা এই প্রতিযেগিতায় যাতে তপু অংশগ্রহন করতে পারে তার জন্য অনেক চেষ্টা করতে থাকলো।কিন্তু কিছুতেই পারলো না।সেবারই প্রথম গনিত অলিম্পিয়াড হওয়ার কথা ছিল।পরে এটা নিয়ে আর তেমন কোন কথা ছিল না তাই সবাই ভাবলো হয়তে এটা আর হবে না। কিন্তু হঠাৎ আবার পেপারে এটা নিয়ে নিউজ আসা শুরু করলো।তখন প্রিয়াংকা খোঁজ নিয়ে কম্পিটিশনের প্রেসিডেন্ট এর সাথে দেখা করলো।তখন অনেক রিকোয়েস্ট করার পর প্রিয়াংকা কে প্রেসিডেন্ট ২ জন কে নেওয়ার কথা বললেন। কিন্তু প্রিয়াংকা ৪০ জন কে নেওয়ার কথা বললেন।পরে অবশ্য ১০ জন কে নেওয়ার কথা বলে রেজিষ্ট্রেশন করলেন।তার এটা করার উদ্দেশ্য ছিল কেউ যাতে তপুকে ছোট করতে না পারে। কারণ সে তো শুধু মাত্র তপুর জন্যই এটা করেছে।তখন সে স্কুলে এসে এই সংবাদ অনেক নাটকীয়তার মাধ্যমে সবাইকে দেয়। তপু সবই বুঝতে পারে।তার আগ্রহ দেখে তাকে প্রতিযোগিতার ভলান্টিয়ার বানানো হয়।
পরদিন ৯ টার সময় কম্পিটিশন। তপু যথা সময়ে গিয়ে উপস্থিত হয়।ওখানে যে উপস্থাপন করছিলেন তার কথা বলার ধরন খুব সুন্দর ছিল। তপু ভাবে প্রিংকাও বড় হয়ে এমন হবে।সে প্রিয়াংকাকে অনেক খুঁজে না পেয়ে এক জায়গায় বসে পরে। এবং কম্পিটিশন শুরু হয়।প্রশ্ন দেখে সে ভাবে এত সহজ প্রশ্ন হয় নাকি কোন প্রতিযোগিতার।তখন সে পুরো প্রশ্ন ভালো করে দেখে।তখন সে একটা কঠিন প্রশ্ম দেখতে পায়।সে ভাবে এটা কঠিন কিন্তু খুব ইন্ট্রাস্টিং একটা অংক।সে ওই একটা অংক করতেই পরীক্ষার পুরো দুই ঘণ্টা শেষ করে ফেলে। তখন গার্ড এসে তার খাটা টানে সে অবাক হয়ে যায়। কারন দুই ঘণ্টা সময় শেষ হয়ে গেছে সে বুঝতেই পারে নি।তারপর সে মন খারাপ করে বের হয় এবং প্রিয়াংকার সাথে দেখা হলে সেই কথা বলে। তখন প্রিয়াংকা বলে চিন্তা করো না পরের বার আবার করিও।এই বলে সে ভলান্টিয়ার এর দায়িত্বে থাকার জন্য চলে যায়।তারপর অপুও চলে যেতে চায় এবং তখন প্রসিডেন্ট আসবেন জন্য আর্মি দিয়ে ভরে গেছে তখন আর কাউকে বাইরে যেতে হচ্ছে না। তখন সে বাধ্য হয়ে থেকে গেলেন। তখন কিছু বক্তব্য এর পরে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান শুরু হলো।সব পুরস্কার দেওয়া শেষে যখন প্রায় সবাই চলে যেতে চাচ্ছেন তখন পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রফেসার বললেন যে এতক্ষণ ১ম, ২য়,৩য় ও চ্যাম্পিয়ানদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।এখনও চ্যাম্পিয়ানের চ্যাম্পিয়নকে পুরস্কার দেওয়া হয় নি। তখন তপু লক্ষ্য করলো সত্যি তখনও একটা পুরস্কার টেবিলে রয়ে গেছে।তখন যে চ্যাম্পিয়ানের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্রফেসর তার কথা বলতে শুরু করলেন।এবং বললেন যে এই অংক করতে তার ২ দিন সময় লেগেছিল এবং অন্যেরও হেল্প নিতে হয়েছিল।কিন্তু এইখানে একজন দুই ঘণ্টায় তা করে দেখিয়েছে।সে আমার চেয়েও অংকে অনেক ভালো। তখন তপুর বুক টা কেমন যেন ধক করে উঠলো।যখন প্রফেসার তপুর নাম এনাউন্সমেন্ট করলো তপু তা বিশ্বাস করতে পারলো না।সেই সময় তপু অনেক চিৎকার আর তালির শব্দ শুনতে পেল তার মধ্যে সে প্রিয়াংকার গলা শুনতে পেল কিন্তু তাকে দেখতে পেল না।তারপর সে স্টেজে গেল এবং অনেক ক্যামেরা একসাথে তার ছবি তুললো এবং সে স্টেজের সকলের সাথে হ্যানশেক করলো এবং প্রেসিডেন্ট তার হাতে পুরস্কার ও সার্টিফিকেট তুলে দিলেন। এবং সাংবাদিকরা তার ইন্টারভিউ নিলো এবং অনেকে তার সাথে ছবি তুললো। এম মুহুর্তে তার সব কিছু বদলে গেল যার সাথে কেউ কথা বলতো না এখন তার সাথে সবাই কথা বলছে।সবাই অনেক কথা বললেও প্রিয়াংকা একটা কথাও বলতে পারলো না। কারন চিৎকার করে তার গলা পুরো বসে গেছে কোন আওয়াজ বের হচ্ছিল না।আর সেটা ঠিক হতে পুরো এক সপ্তাহ লেগেছিল।সেই রাতে তার প্রিন্সিপাল ও তার সাথে দেখা করতে এসেছিল ফুল নিয়ে এবং সে স্টোর রুমেই এসেছিল। কারন তার আগে প্রিয়াংকা তাকে সব বলে দিয়েছিল।তার বাড়ির সবাইও টিভিতে নিউজ টা দেখেছিল কিন্তু কেউ তার কাছে এলো না।বাইরে সব কিছু বদলে গেলেও বাড়িতে কিছুই বদলালো না।সেই রাতে তপুর মা আবার একটা রড নিয়ে তাকে পিটাইত আসলো এবং তপুকে বললো কেন তুই সাংবাদিক দের মিথ্যা বলেছিস।কেন বলেছিস এই সাফল্য তোর পরিবারেরও ভুমিকা আছে। এই প্রথম তপু বললো আমি মিথ্যা বলিনি আম্মু। কারণ আমার যখনি খুব মন খারাপ হয় তখনি আমি আগের কথা ভাবি যখন তোমরা সবাই আমাকে খুব আদর করতে। তখন তার মা তাকে আর না মেরে চলে গেল।
এভাবেই তপুর জীবন বদলে গেল। এখন আর বাসায় স্কুলের বেতন চাইতে হয় না।আপু নিজে থেকেই দেয়।যদিও তার এখন আর দরকার নেই। কারণ স্কুলে এখন আমার সব ফ্রি এবং স্কুল থেকেই তপুকে ৩০০ টাকা করে দিত।এবং পরে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম একটা টিউশনও ম্যানেজ করে দেয় এবং সে ২০০০ টাকা করে পেত।এখন তার সাথে সকলে কথাও বলে।এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটে যায়। সে সব আর না বলি এমনি আমার লেখা অনেক বড় হয়ে গেছে।
অবশ্য শেষে তপুর মা মারা যায়।এবং শেষে তপুর মা তপুর সাথে ভালো ভাবে কথা বলে এবং তাকে আগের মত বুকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় মারা যান।যখন সে রুম থেকে বের হয়ে আসতেছিল তখন তপুর মুখে একটা হাসি ছিল।অনকেই ভাববে যে মা মারা গেছে তপুও একটা মানুষ কিভাবে হাসে।এই হাসির অর্থ প্রিয়াংকা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল তাই তো সে তপুকে দেখে নিজেও একটু হেসেছিল।
মোটকথায় অসাধারণ একটা বই।প্রতিকূলতা জীবনে আসবে কিন্তু একবার টিকে গেলে একদিন ঠিকই ভালো কিছু আসবে।আর প্রিয়াংকার মত একটা বন্ধু আসলেও জীবন বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। একটা সাফল্য আপনার পুরো জীবন টাই বদলে দিবে। তাই হাজার প্রতিকূল পরিস্থিতি আসুক না কেন আমাদের কে টিকে থাকতে হবে।
ধন্যবাদ


Post a Comment

0 Comments